ধরুন আপনার কোন আত্মীয় বা প্রতিবেশী কোভিড-১৯ রোগী আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। হঠাৎ বিশেষ পোষাক পরিধানকৃত একঝাঁক লোক পুলিশ ভ্যান ও এম্বুলেন্সে সাইলেন্স কিংবা বিপদ সংকেত বাজিয়ে তার ঘরে ডুকে অভিনব কায়দায় তাকে বিচ্ছিন্ন স্থানে নিয়ে গেল।পরিবারের কারো সাথে শেষ দেখাটিও করতে দেওয়া হলনা।আইসোলেশন ওয়ার্ডে উনি কেমন আছে তার খোঁজখবর ঘনিষ্ঠজনরাও পেলনা।দূর্ভাগ্য হলে এ যাত্রাই তার শেষ যাত্রা।পরিবার পরিজন এমনকি সমাজকেও এবার সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ করে রাখা হবে।আর যদি সৌভাগ্য হয় তাহলে জীবন নিয়ে ফিরে আসবে।অর্থনৈতিক দৈন্যের শিকার হবে মানসিক যন্ত্রণা আমৃত্যু ভোগ করবে।এহেন অবস্থা দেখে সম্ভাব্য রোগীরা আর বাসায় অবস্থান করার সাহস পাবেননা।আক্রান্ত হওয়া মাত্র সে নিজকে লুকানোর সমূহ চেস্টা করবে।ফলে তার মাধ্যমে আরো অধিক সংখ্যক লোক আক্রান্ত হবে।ফাঁসির আসামির মত করে একজন রোগীকে এভাবে কমান্ডো স্টাইলে কেন উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হল!প্রতিটা রোগী একজন রোগী হিসাবে যে সমানুভূতি পাওয়ার কথা তার কতটায় বা এই রোগীরা পাচ্ছে?আমাদের এহেন আচরণ দেখে প্রতিটা রোগী মরার আগেই হয়ত কয়েকবার মানসিকভাবে খুন হচ্ছে,মারা যাচ্ছে । কোভিড-১৯ রোগের বিস্তার বেশি কিন্ত মৃত্যুহার বড় বেশি নয় ডের কম।৫-৬ শতাংশ অর্থ্যাৎ একশজনে সর্বোচ্চ ৬ জন মারা যায়।এশিয়া মহাদেশে আজকে(১৩ এপ্রিল-২০২০) পর্যন্ত মোট আক্রান্ত প্রায় লক্ষ আর মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১১ হাজারের মত।৩.৭ শতাংশ অর্থ্যাৎ এশিয়ায় এ রোগের মৃতুহার ইউরোপের প্রায় অর্ধেক। তাও তারা কোন কোন সহরোগের কারণে অধিকাংশ মৃত্যুবরণ করছেন । কিন্তু প্রতিটা করোনা রোগীর প্রতি আমাদের সাঁজোয়া অভিযান দেখে মনে হয় আক্রান্ত মানেই মারা যাবে।সে অভিশপ্ত;তার কোন অধিকার নেই এমনকি মতামতও নেই!যে কারো যে কোন অসুখ যেকোন বয়সে হতে পারে।উত্তম সেবা পেলে দ্রুত সেরে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্ত করোনার বেলায় কেন যেন সবই অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। বিশ্বের কোন দেশে হয়ত লকডাউন শুরু হয়ছে সাথে সারা দুনিয়া তাই শুরু করে দিল অথচ কোন দেশ কতটা এই লকডাউনে উপকৃত কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হল তার কোন হিসাব স্পষ্ট করে কষা হলোনা।কোন কোন দেশের নিন্ম আয়ের মানুষের সংখ্যা বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত সারা দুনিয়ার মানুষের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।যারা দিন আনে দিন খায়;নুন আনতে পান্তা পুরায় অবস্থা। লকডাউনেে তারা নিশ্চয়ই অশান্তিতে আছেন তা খুব সহজেই অনুমেয়।বিশ্বব্যাংকের ‘পভার্টি অ্যান্ড শেয়ার প্রসপারিটি বা দারিদ্র্য ও সমৃদ্ধির অংশীদার ২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী হতদরিদ্র জনসমষ্টির অর্ধেকই বসবাস করে পাঁচটি দেশে। এদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের নামও। বাকি চারটি দেশগুলো হলো ভারত, নাইজেরিয়া, কঙ্গো ও ইথিওপিয়া।ক্রয়ক্ষমতার সমতা অনুযায়ী (পিপিপি), যাঁদের দৈনিক আয় ১ ডলার ৯০ সেন্টের কম, তাঁদের হতদরিদ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০১৮ সালে এসে ওই পাঁচটি দেশে কত দরিদ্র লোক বাস করে, সেই হিসাবও দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১ কোটি ৬২ লাখ মানুষের দৈনিক আয় ১ ডলার ৯০ সেন্টের কম। আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যরেখা অনুযায়ী, এরা হতদরিদ্র। এ ছাড়া ভারতে ৯ কোটি ৬৬ লাখ, নাইজেরিয়ায় ৯ কোটি ৯২ লাখ, কঙ্গোয় ৬ কোটি ৭ লাখ এবং ইথিওপিয়ায় ২ কোটি ১৯ লাখ গরিব মানুষ বাস করে। অবস্থাদৃশ্যে সবই ভুতুড়ে মনে হচ্ছে আমার।অন্তত কোন এক দেশের একটু ভিন্নভাবে সহানুভূতিশীল পথ অবলম্বন করা দরকার ছিল।যাতে করে জীবিত ও মৃত সকলের মঙ্গল হয়।আমাদের মনে রাখা উচিত HIV/AIDS রোগীদের প্রতিও আমরা প্রথম দিকে অভিশপ্ত এমন আচরণ করছি।আর এখন মানুষ তাদের প্রতি অনেকটা সভ্য সহানুভূতিশীল আচরণ করে।রোগীকে নয় রোগকে ঘৃণা করা উচিত। নিজকে বাচাঁনোর জন্যই আমরা আক্রান্ত একজন অসহায় মানুষকে এতটা নিষ্ঠুরতা দেখাচ্ছি। আমরাই বড় স্বার্থপর।আমরা কেবল নিজদের ভালোটা দেখি।অন্যের ভালো সহ্য করতে পারিনা।কি দেশ কি দশ সকলে একই।আচ্ছা কেউ কি জেনে শোনে স্বেচ্ছায় কোন দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে চাই?যদি না-ই হয় তাহলে কেন আমরা একজন মানুষের প্রাপ্য ন্যুনতম সম্মানটুকুও দেখাতে পারিনা।করোনা যদিও হয় অভিশাপ তার শাস্তি আমরা কেন দিব?সেবাব্রত কিংবা মানবিকতা আজ বিলুপ্ত প্রায়।ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল এর সেই মানবিক উদাহরণ এখন আর আমাদের উদ্বেলিত করেনা,সাহস যোগায়না।রোগী দেখা সওয়াবের কাজ তাও আমরা ভুলেগেছি বহু আগে।ফলে আমরা আক্রান্তের প্রতি বেশ অবিচার করছি।ফলে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অনেকে বিচ্ছিন্ন ঘরে মানসিক অবসন্নতায় ভোগেন।বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াকেই মূখ্য মনে করেন।তারা হয়ত মরে গিয়ে বেঁচে যাবেন;আমরাই বেঁচে থেকে বাকি জীবন অপরাধবোধে জর্জরিত হব।তখন আর কারো কাছে ক্ষমা চাওয়ারও সুযোগ পাবোনা।সময় থাকতে আমাদের চিন্তা চেতনায় পরিবর্তন আনা উচিত। হুজুগের মত কেবল অন্যদের অনুসরণ না করে প্রতিটি দেশের উচিত একটু ভিন্নভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করা।রাখে আল্লাহ মারে কে,মারে আল্লাহ রাখে কে?মৃত্যু অনিবার্য।নির্ধারিত সময়ে সকলে মৃত্যুবরণ করবো তাতে কারো সন্দেহ নেই।সুতরাং একজন অসহায় রোগীকে অভিশপ্ত না ভেবে তাদের উত্তম সেবা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হই।তাহলেই বেচেঁ যাবে হাজারো মানবতা।আর সেবাকর্মে যদি কারো মৃত্যুও হয় তাতে কারো আফসোস থাকার কথা নয়।
লেখকঃ
জিয়াউর রহমান মুকুল
মানবিক ও উন্নয়ন কর্মী,
শেড ।
ইমেলঃ [email protected]
ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য একটি অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গা হচ্ছে কক্সবাজার। যারা প্রথমবারের মতো কক্সবাজার যাচ্ছেন বা ...
পাঠকের মতামত